জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও বাফুফের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আজকের তার এ অবস্থা হয়েছে বলে মনে করছেন ফুটবলের সাথে জড়িতরা।
শৈশবে গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলতেন রিপন। অল্প বয়সেই পায়ের নৈপুণ্যে নজর কেড়েছিলেন তিনি। যাতে উৎসাহ দেয় পাড়াপ্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবরাও। ধীরে ধীরে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দানা বাঁধে বুকে।
ফরিদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী জানান, রিপন দাস ২০১২ সালে এয়ারটেলের রাইজিং স্টার চ্যাম্পিয়ন হয়ে ১২ জনের একটি টিমের সাথে ১৭ নভেম্বর ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাবে অনুশীলন করার জন্য বিদেশে যান। এরপর সেখানে ১০ দিনের অনুশীলন শেষ করে ফিরে আসেন দেশে।
দেশে আসার পর বাফুফের তদারকির অভাবে রিপনকে তার নিজ জেলায় ফরিদপুরে ফিরে আসতে হয়। ফরিদপুরে এসে সংসারের অভাব অনটনের কারণে বাবার কর্মস্থল ফরিদপুর সড়ক বিভাগে মাস্টার রোলের পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজে যোগ দেন তিনি।
গত কয়েক বছর ধরে ফরিদপুর সড়ক বিভাগে এ কাজ করছেন রিপন। তারপরও প্রতিদিনের রুটিন কাজ শেষে সুযোগ করে ঠিক ফুটবল নিয়ে নেমে পড়েন মাঠে।
ফরিদপুর জেলা ফুলবল টিমের কোচ প্রণব কুমার মুর্খাজী বলেন, রিপনের ফুলবলের প্রতি বিশেষ প্রেম রয়েছে। যে কারণে অফিসের পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষে সুযোগ পেলেই অনুশীলন করতে স্টেডিয়ামে চলে আসে। এখনো তার ইচ্ছা দেশসেরা ফুটবলার হওয়া।
ফরিদপুর ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম ভোলা বলেন, রিপনের মতো ফুটবলার তৈরি হয় খুব কম। বাফুফে যদি সঠিকভাবে ভূমিকা নিত তাহলে তাকে এভাবে ঝড়ে পড়তে হতো না। এখনো তার অনেক সুযোগ রয়েছে।
ফুটবলার রিপন কুমার দাস বলেন, ‘সংসারের আর্থিক অভাব-অনাটনের কারণে আমি এখন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। বাবা-মায়ের কষ্টের কথা চিন্তা করেই এ কাজ করছি।’
বড় ফুটবলার হতে চেয়েছিলেন জানিয়ে রিপন বলেন, সংসারের দৈন্যদশা কাটানোর জন্য চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পেরে উঠিনি। সরকার যদি আমার বিষয়টি দেখে তাহলে হয়তো আমি আবারও বল নিয়ে মাঠে দর্শকদের মনজয় করতে পারবো।’
‘ইংল্যান্ডে যাওয়ার পরে সে দেশের নামকরা ফুটবল তারকারা আমাদের সময় দিয়েছেন। দেখিয়েছেন কীভাবে আরও ভালো ফুটবল খেলা যায়। ফুটবল খেলার মান কীভাবে আরও উন্নত করা যায়। কিন্তু সেই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগাতে পারিনি,’ বলেন নিজের আক্ষেপের কথা।
রিপনের মা পান্তা দাস বলেন, ‘আমার দুই ছেলের মধ্যে রিপন সবার বড়। ছোট ছেলে তপন এখনও কিছু করে না। শুধু সংসারের অভাবের কারণে তাকে ওর বাবার পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ বেছে নিতে হয়েছে। এতে আমাদের খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। রিপন যদি আয় রোজগার না করতে পারে তাহলে আমাদের যে না খেয়ে থাকতে হবে।’